নেনে নন!! মাধুরীর বিয়ে অন্য কারো সঙ্গে স্থির হয়েছিল তা হয়েছিলেন রিজেক্ট
এমনিতেই মেয়ে সিনেমায় নামুক, এমন ইচ্ছে ছিল না রক্ষণশীল বাবা-মার। তার উপর মেয়ের প্রথম কয়েকটি ফিল্ম যখন ফ্লপ করল, তখন তাঁরা মনে মনে ভাবলেন, ফিল্ম-টিল্মে অভিনয় করে কাজ নেই, তার চেয়ে বিয়ে করে মেয়ে সংসার করুক।
মাধুরী দীক্ষিত নিঃসন্দেহে বলিউডের সর্বকালের সব থেকে জনপ্রিয় নায়িকাদের মধ্যে এক জন। অভিনয়ের জীবনে তিনি যেমন সফল, তেমনই তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও সুপ্রতিষ্ঠিত। বিগত ১৮ বছর ধরে সফল কার্ডিওভ্যাস্কুলার সার্জন শ্রীরাম মাধব নেনে-র সঙ্গে সুখী দাম্পত্য জীবন যাপন করছেন মাধুরী। দুই পুত্রসন্তানের জননীও হয়েছেন তিনি। কিন্তু জানেন কি, এক সময়ে এই মাধুরীরই বিয়ে স্থির হয়েছিল অন্য কারো সঙ্গে, এবং মাধুরী নন, তাঁর সেই প্রস্তাবিত স্বামীই ভেঙে দিয়েছিলেন বিয়ে। স্বপ্নসুন্দরী মাধুরীকে তাঁর পছন্দ হয়নি।
সেটা ১৯৮০-র দশকের প্রথমার্থ। নিষ্ঠাবান মরাঠি ব্রাহ্মণ পরিবারের কন্যা মাধুরীর বয়স তখন ২০-ও ছোঁয়নি। নাচের শখ ছিল ছোটবেলা থেকেই। কৈশোরে পা দেওয়ার পর থেকে তিনি বলিউডে নিজের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা চালাতে থাকেন। প্রথম সিনেমা ‘অবোধ’-এ যখন অভিনয় করেন মাধুরী, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৭। ফিল্মটি একেবারেই ফ্লপ করে। ১৯৮৫ সালে রিলিজ হওয়া মাধুরীর অভিনীত দ্বিতীয় সিনেমা ‘আওয়ারা বাপ’ও একেবারেই জনপ্রিয়তা পায়নি। মাধুরী অবশ্য তাতে হাল ছাড়ার পাত্রী ছিলেন না। বলিউডে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা তিনি চালিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু তাঁর বাবা-মা শঙ্কর এবং স্নেহলতা মেয়ের অ্যাক্টিং কেরিয়ার নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন।
এমনিতেই মেয়ে সিনেমায় নামুক, এমন ইচ্ছে ছিল না রক্ষণশীল বাবা-মার। তার উপর মেয়ের প্রথম কয়েকটি ফিল্ম যখন ফ্লপ করল, তখন তাঁরা মনে মনে ভাবলেন, ফিল্ম-টিল্মে অভিনয় করে কাজ নেই, তার চেয়ে বিয়ে করে মেয়ে সংসার করুক। সেই প্রস্তাব দেওয়া হল মাধুরীকে। মাধুরী তো স্বভাবতই নারাজ। তিনি মোটেই বিয়ে করতে চান না। তাঁর লক্ষ্য অভিনয়। কিন্তু বাবা-মার জেদের সামনে তাঁকে নতিস্বীকার করতে হল। বিয়েতে সম্মতি দিলেন তিনি। মেয়ের জন্য ছেলে দেখা শুরু করলেন শঙ্কর ও স্নেহলতা। মেয়ে বলিউডের উঠতি নায়িকা, কাজেই বাবা-মার মনে হল বলিউডের সঙ্গে যুক্ত কোনও ছেলেই মাধুরীর উপযুক্ত স্বামী হতে পারে। অনেক অনুসন্ধানের পর মেয়ের জন্য ছেলে খুঁজে পেলেন তাঁরা। সেই ‘পাত্র’ আর কেউ নন, গায়ক সুরেশ ওয়াডকর। সুরেশ ছিলেন মাধুরীর চেয়ে সাত বছরের বড়। ‘প্রেম রোগ’ সিনেমার ‘ম্যায় হুঁ প্রেম রোগী’, ‘ডিস্কো ডান্সার’-এর ‘গোরো কি না কালো কি’, কিংবা ‘মাসুম’-এর ‘হুজুর ইস কদর’ প্রভৃতি গানে কণ্ঠদানের সুবাদে তখন বলিউডে সুরেশ ওয়াডকর মোটামুটি পরিচিত নাম। তাঁর কাছেই মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠান মাধুরীর বাবা-মা।
কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল, সুরেশ মাধুরীকে রিজেক্ট করে দেন। মাধুরীকে দেখে মোটেই পছন্দ হয়নি সুরেশের। তাঁর বক্তব্য ছিল, মাধুরী বড্ড বেশি রোগা। অতো রোগা বউ তাঁর চাই না।
সুরেশের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঘটনা অবশ্য আদপে মাধুরীর কাছে শাপে বর হিসেবে প্রতিপন্ন হয়। সুরেশের সঙ্গে বিয়ে ভেস্তে যাওয়ার পরে মাধুরীর বাবা-মা আর মেয়েকে চাপ দেননি বিয়ের জন্য। মাধুরী বলিউডে নিজেকে সম্পূর্ণ নিয়োজিত করেন। ১৯৮৮ সালে রিলিজ হয় অনিল কপূর-মাধুরীর ‘তেজাব’। সেই সিনেমা রাতারাতি মাধুরীকে সুপারস্টার করে দেয়। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি মাধুরীকে।
১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে শোনা গিয়েছিল, সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন মাধুরী। সঞ্জয় তখন রিচা শর্মার সঙ্গে বিবাহিত জীবনযাপন করছেন। মাধুরীর বাবা-মার এই সম্পর্কের ব্যাপারেও মোটেই সমর্থন ছিল না। সঞ্জয়ের সঙ্গে মাধুরীর সম্পর্ক অবশ্য খুব একটা বেশি এগোতেও পারেনি। ১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে টাডা-য় গ্রেফতার হন সঞ্জয়। তার পরেই সঞ্জয়ের জীবন থেকে দূরে সরে আসেন মাধুরী।
১৯৯৯ সালে মাধুরীর সঙ্গে বিয়ে হয় নেনে-র। বর্তমানে তাঁর সংসারে সুপ্রতিষ্ঠিত মাধুরী। এখন তাঁর প্রথম যৌবনের কথা হয়তো ভুলে গিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গ নিজে কখনও উত্থাপনও করেন না। কিন্তু বলিউডের অন্দরমহলে এখনও কান পাতলে সুরেশ-মাধুরীর ভেস্তে যাওয়া বিয়ের কথা শোনা যায়।
Comments
Post a Comment