কেমন আছে কেনিয়ান প্লেয়ার স্তিভ টিকলো??



১৩৫ ওয়ানডেতে সাড়ে তিন হাজার রান আর চুরানব্বই উইকেট, খুব ভালো ব্যাটসম্যান বললে অনেকেই ভ্রু কুঁচকে তাকাবেন ত্রিশের কম গড় নিয়ে কেউ আবার ভালো ব্যাটসম্যান হয় কীভাবে? মানুষটার কখনও টেস্ট ক্রিকেট খেলা হয়নি, এই তথ্যও আহামরি কিছু নয় কত দারুণ খেলয়াড়ই তো পাননি সারা পোশাকের অভিজাত ক্রিকেটের আকাঙ্খিত স্বাদ তাতে কি? তবে নামটা শুনলে তাঁর জন্যে খানিকটা দুঃখবোধ হবে, এটা নিশ্চিত স্টিভ টিকোলো, কেনিয়ার ক্রিকেটের পোস্টারবয়, নিজের সময়ে ব্যাট হাতে যিনি ছিলেন সহযোগী দেশগুলোর টেণ্ডুলকার!

জন্মেছিলেন কেনিয়ার নাইরোবিতে, পরিবারের মধ্যেই ক্রিকেটের আবহটা ছিল বড় দুই ভাই খেলেছেন জাতীয় দলে, টিকোলোও হেঁটেছিলেন তাঁদের দেখানো পথেই ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ওয়ানডে অভিষেক কটকে, স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডাউনে নেমে খেলেছিলেন ৬৫ রানের ইনিংস সেই আসরেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করলেন ৯৬ পরের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধ কণ্ডিশনেও হাসি অব্যহত রইলো টিকোলোর ব্যাটের, ভারত আর স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পেলেন হাফ সেঞ্চুরী ২০০২ সালে পেলেন দলের অধিনায়কত্ব, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলেছিলেন ৯৩ আর ৬৯ রানের দারুণ দুটি ইনিংস পরের বছর কেনিয়ার রূপকথার বিশ্বকাপ যাত্রা, টিকোলোর হাতে ধরে দল গেল সেমিফাইনালে এমন দারুণ অর্জনের পরেও টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া হয়নি কেনিয়ার, সাদা পোশাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাঠে নামা হয়নি টিকোলোর

খেলেছিলেন ২০১১ বিশ্বকাপে, তারপর ব্যাটপ্যাড তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একেবারে কিন্ত দলের চাহিদার কথা ভেবে বোর্ডের অনুরোধে ফিরে এসেছিলেন আবার ক্যারিয়ারের সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৪ সালে, তেতাল্লিশ বছর বয়সে বছরের পর বছর ধরে কেনিয়ার ক্রিকেটটাকে টেনে নিয়েছেন নিজের কাঁধে করে, নন টেস্ট প্লেইং দেশগুলোর খেলোয়াড়দের কাছে এক অত্যাশ্চর্য অনুপ্রেরনার নাম ছিলেন এই মানুষটা দুর্বল দলগুলো থেকে উঠে এসেও যে নিজের প্রতিভায় বিশ্বক্রিকেটে যে কেউ ব্যাটে-বলে আপন কীর্তির ছাপ রেখে যেতে পারে, সেটা তো টিকোলোই করে দেখিয়েছিলেন সবার আগে সহযোগী দেশগুলোর প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে খেলেছেন শততম ওয়ানডে, পেরিয়েছেন ৩০০০ রানের মাইলফলক ক্যারিয়ারে ৩২ গড়ে ৯৩ উইকেট, .৭৩ ইকনোমি রেটটা জানিয়ে দেয় সেই সময়ে দারুণ কার্যকরী এক অলরাউন্ডার হিসেবে স্টিভ টিকোলোর উপস্থিতি ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফির ফাইনালে বাংলাদেশকে কাঁদিয়েছেন নিজের ব্যাটের পাশবিকতায়, তাঁর ১৪৭ রানের ইনিংসে পুড়েছিলাম আমরা ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ১৯৯৯ এর অপরাজিত ১০৬ রানের ইনিংসের কথা টিকোলো মনে করতে পারেন এখনও

স্টিভ টিকোলোর ক্রিকেটটা ছাড়ার কথা ছিল না, ছাড়েননি তিনি মাঠের ক্যারিয়ার শেষ করেছেন, এরপর শুরু করেছেন মাঠের বাইরের ক্যারিয়ার খেলোয়াড়ি জীবনেই জড়িয়ে পড়েছেন কোচিং পেশার সঙ্গে শুরুতে ছিলেন উগান্ডার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ ২০১৪ সালে তাঁকে দেয়ে হয়েছিল কেনিয়া দলকে সামলানোর দায়িত্ব ২০১৬ সালে তিনি আবার ফিরে গেলেন উগান্ডায়, আফ্রিকার দেশটির মূলদলের দায়িত্ব নিয়ে উগাণ্ডার প্রতি অনেক আগে থেকেই একটা ভালোলাগা আছে তাঁর, সেখানে ক্লাব ক্রিকেট খেলেছিলেন, দেখেছেন দারুণ কিছু প্রতিভা ওদের সাথে কাজ করার তাড়না ছিল, নিজের অর্জিত জ্ঞানটুকু ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন শিষ্যদের মধ্যে এখনও আছেন সেখানেই উগাণ্ডা এখন খেলছে আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লীগের ডিভিশান-

কেনিয়ার ক্রিকেট নিয়ে আছে আক্ষেপ দারুণ সম্ভাবনাময়ী একটা অবস্থান থেকে অতল গহবরে পতনটা কষ্ট দেয় টিকোলোকে, তিনিই তো ছিলেনকেনিয়ার ক্রিকেটের সোনালী যুগের সবচেয়ে বড় আর উজ্জ্বল হীরকখণ্ড ক্রিকইনফোকে বলছিলেন- “এখনকার খেলোয়াড়েরা পরিশ্রম করতে চায় না একদমই তারা যদি নিজেদের না বদলায়, আমি বলে দেই, কেনিয়ার ক্রিকেটটাও বদলাবে না আমাদের সময়ে যেখানটায় ছিল, সেখানে তো ফিরে যাওয়া অসম্ভবই

উগান্ডার দলটাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিচ্ছেন ধীরে ধীরে, ফলও পাচ্ছেন সেটার গতবছর নিজের দেশ কেনিয়াকে টিকোলোর দল পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ধ্বসিয়ে দিয়েছে - ব্যবধানে খেলোয়াড়দের নিজেদের মতো করে খেলার স্বাধীনতাটা দিয়ে রেখেছেন তিনি, বলেছেন- আমার কাজ হচ্ছে ওদের স্বাধীনভাবে খেলার সুযোগ করে দেয়া ওরা পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে অবশ্যই নিজেদের প্রমাণ করবে, এটা আমি বিশ্বাস করিআর এই পর্যাপ্ত ম্যাচের সুযোগ পাওয়াটা নিয়েই আছে আপত্তি তাঁর মতে সহযোগী সদস্য দেশগুলোর ক্রিকেট এগিয়ে না যাবার মূল কারণ হচ্ছে খেলার অভাব টেস্ট খেলুড়ে দেশ তো দূরে থাক, নিজেদের মধ্যেও নিয়মিত খেলার সুযোগ পায় না অনেক দল একারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট থেকে অনেকটাই দূরে সরে যাচ্ছে তাঁরা

খেলোয়াড়ি জীবনে যুদ্ধ করেছেন ব্যাট বলকে ঢাল তলোয়ার বানিয়ে দুর্বল কেনিয়াকে গড়ে তুলেছিলেন ভয় জাগানিয়া এক দল হিসেবে মাঠের ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন, কিন্ত টিকোলোর লড়াইটা শেষ হয়নি, চলছে আজও মাঠে যেভাবে প্রতিপক্ষকে সামলেছেন, দারুণ পারফরম্যান্সে পরাভূত করেছেন, ঠিক সেভাবেই নতুন ভূমিকাতেও সফল হবেন টিকোলো, এটাই কামনা টিকোলো সফল হলে এগিয়ে যাবে আফ্রিকার ক্রিকেট, এগিয়ে যাবে খেলাটাই


Comments

Popular posts from this blog

শাহরুখ খান কেন ‘ফ্লপ খান’?

কপিল শর্মা শোয়ের স্টার সুনিল গ্রভারের শোওতে!!!